বরিশাল ক্রাইম নিউজ

বরিশাল ক্রাইম নিউজ

অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা

Print Friendly, PDF & Email

বরিশালের ৯টি আসনে শক্ত অবস্থানে আ’লীগ, ৫টিতে বিএনপি

অনলাইন ডেস্ক :: বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনের মধ্যে সাতটিতে কখনোই হারেনি আওয়ামী লীগ। পাঁচটিতে জয়ের পাল্লা সব সময় ছিল বিএনপির দিকে। বাকি ৯টি আসন একেক সময় একেক দলের ঝুলিতে গেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, এবার এ অঞ্চলের ৯টি আসনে বিএনপি লড়াকু প্রার্থী দিতে পারেনি। এ কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন। এসব আসনে আওয়ামী লীগ শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চারটি জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ মনে করা হয়। এ চারটি নির্বাচনের জয়-পরাজয়ের ফলাফল বিশ্লেষণে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ২১টি নির্বাচনী এলাকার সাতটিকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে ধরা হয়। এগুলো হল- বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া), ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান), বরগুনা-১ (বরগুনা সদর-আমতলী-তালতলী), পটুয়াখালী-২ (বাউফল), পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা), পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) এবং পিরোজপুর-২ (ইন্দুরকানী-ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী)। এর মধ্যে পিরোজপুর-২ আসনটি সরাসরি আওয়ামী লীগের না বলে মহাজোটের বলা যেতে পারে। কেননা এখানে সব সময় জয়ী হয়েছেন মহাজোটের অংশীদার জেপির (মঞ্জু) প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। ’৯১ পরবর্তী সময়ে চারটি নির্বাচনের মধ্যে তিনটিতেই বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে একবার বিএনপি জিতলেও ভোটের ব্যবধান খুব একটা ছিল না। ভোলা-২ আসনে বিএনপি একবার জিতলেও বাকি তিনবারই আওয়ামী লীগের দখলে গেছে। বরগুনা-১ আসনে সবক’টি নির্বাচনেই জিতেছে আওয়ামী লীগ। একই ভাবে পটুয়াখালী-৩ ও ৪ আসনে জিতেছে দলটি। পটুয়াখালী-২ আসনে চারটি নির্বাচনের তিনটিতেই আওয়ামী লীগের কাছে হেরেছে বিএনপি। বরিশাল অঞ্চলের যে চারটি আসনে বিএনপি বারবার জিতেছে সে আসনগুলোর অন্যতম হল বরিশাল-৫ (সদর)। এ আসনে কোনো নির্বাচনেই দলটি পরাজিত হয়নি। এছাড়া বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) ও বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে তিনবার করে জিতেছে তারা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনে ধানের শীষ চার হাজার ভোটের ব্যবধানে হারলেও সেবার বিদ্রোহী প্রার্থী কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন পেয়েছিলেন প্রায় ২১ হাজার ভোট। এবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জয়নুল আবেদীন। ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনে চারটি নির্বাচনের তিনটিতে জয় পেয়েছে বিএনপি। এছাড়া ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতলেও এর আগে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনে ঝালকাঠি-২ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান ছিল তৃতীয়।

উল্লিখিত ১১টি আসনের বাইরে থাকা ১০টি আসনে কখনোই এককভাবে জয় ধরে রাখতে পারেনি কোনো দল। বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে জিতেছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ। বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে দু’বার বিএনপি, একবার আওয়ামী লীগ এবং একবার জাতীয় পার্টি জিতেছে। ভোলা-১ (ভোলা সদর) আসনে দু’বার বিএনপি ও দু’বার আওয়ামী লীগ; ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে দু’বার বিএনপি ও দু’বার আওয়ামী লীগ; বরগুনা-২ (বেতাগী-বামনা-পাথরঘাটা) আসনে একবার স্বতন্ত্র, একবার ইসলামী ঐক্যজোট, একবার বিএনপি ও একবার আওয়ামী লীগ; ঝালকাঠী-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে একবার আওয়ামী লীগ, একবার জাতীয় পার্টি এবং দু’বার বিএনপি; ঝালকাঠি-২ (ঝালকাঠি সদর-নলছিটি) আসনে দু’বার বিএনপি, একবার জাতীয় পার্টি ও একবার আওয়ামী লীগ; পটুয়াখালী-১ (সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকী) আসনে দু’বার বিএনপি ও দু’বার আওয়ামী লীগ; পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর-নাজিরপুর-স্বরূপকাঠী) আসনে দু’বার জামায়াত, দু’বার আওয়ামী লীগ এবং পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে একবার করে বাকশাল, জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ জিতেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট সঠিক প্রার্থী বাছাই করতে না পারায় তাদের জয়ের সম্ভাবনা কম। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিমত, মনোনয়নের ভুলে অন্তত ৯টি আসনে আগেই হেরে বসে আছে বিএনপি। তাদের এ অভিমতের রেকর্ড সংরক্ষিত আছে। ভোলা-৪ আসনের একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, ভোটারদের প্রশ্ন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ১০ বছর ধরে চরফ্যাশন-মনপুরায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সেখানে বিএনপির প্রার্থী নাজিমউদ্দিন আলমও এর আগে ১০ বছর এমপি থেকে কি করেছিলেন? ভোটারদের এমন প্রশ্নের যথার্থ উত্তর কেউ দিতে পারেনি। ক্লিন ইমেজের নতুন কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে সুযোগ চাইতে পারতাম।

পটুয়াখালী-৩ আসনে দশমিনা উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের এমপি থাকাবস্থায় গোলাম মাওলা রনি আমাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছেন, মামলা-হামলা দিয়ে আমাদের ঘরছাড়া করেছেন। বিএনপির হয়ে তার জন্য ভোট চাওয়া তো আমাদের কাছে সবচেয়ে কঠিন। এখানে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে লড়াইটা অনেক সহজ হতো।

পিরোজপুর-১ আসনে স্বরূপকাঠী উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এ আসনে পরপর দু’বার নির্বাচিত হয়েছেন। সাঈদীর নিজ উপজেলা ইন্দুরকানী আগে ছিল পিরোজপুর-১ আসনের অধীনে। কিন্তু ইন্দুরকানী বর্তমানে পিরোজপুর-২ আসনে পড়েছে। এ হিসাবে ইন্দুরকানীর ৫৫ হাজার ভোটও সেখানে চলে গেছে। এছাড়া পিরোজপুর-১ আসনে যুক্ত হওয়া প্রায় দেড় লাখ ভোটার স্বরূপকাঠী উপজেলার। সাঈদীপুত্র শামিম সাঈদীকে পিরোজপুর-২ আসনে মনোনয়ন দিয়ে পিরোজপুর-১ আসনে বিএনপির কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে দুটি আসনেই জয়ের সম্ভাবনা ছিল ঐক্যফ্রন্টের।

বরিশাল-১ আসনের আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, ১০ বছরে ১ দিনের জন্যও দুই উপজেলা সদরে আসেননি দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন। ওয়ান-ইলেভেনে সংস্কারে যাওয়ায় দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীর একটা বড় অংশও প্রচণ্ডভাবে তার বিরুদ্ধে। তার ওপর এ আসনে মনোনয়নের লড়াইয়ে থাকা প্রভাবশালী দুই বিএনপি নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমান এবং ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান ও তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরা এখন পর্যন্ত সক্রিয় নন স্বপনের পক্ষে।
ঝালকাঠি-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জিবা আমীন খানের ব্যাপারেও অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনী এলাকার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না থাকার পাশাপাশি তার বাবা আখতার ব্যারিস্টারের সরাসরি স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। বরগুনা-২ আসনে বারবার দল বদল করা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুবকে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া নিয়ে রয়েছে হতাশা।

বরিশাল-৪ এবং ভোলা-১ আসনেও বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে চরম ক্ষোভ আর অসন্তোষ রয়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে। ভোলা সদর উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের জায়ান্ট নেতা তোফায়েল আহমেদের বিপরীতে বিএনপির এমন একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে যার জিতে আসা শুধু মুশকিলই নয় প্রায় অসম্ভব।

২০০৮ সালের নির্বাচনে দেশজুড়ে যখন বিএনপির ভরাডুবি ঠিক সেই সময়ে বরিশাল-৪ আসনে জয়লাভ করেন বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। কিন্তু এবার সেই মেজবাহকে মনোনয়ন দেয়নি দল। যাকে দেয়া হয়েছে তিনি আওয়ামী লীগের পঙ্কজ দেবনাথের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকতে পারবেন না বলে বিএনপি নেতাকর্মীদেরই অভিমত। এ নিয়ে তারা হতাশও।
৯টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন ভুলের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, এবারের নির্বাচন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার নির্বাচন। ভোটের মাঠে আমরা সেই লড়াই করছি। বিএনপির মতো একটি বড় দলে যেখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী কয়েক হাজার সেখানে দলের অভ্যন্তরে মনোনয়ন না পাওয়ার দুঃখ থাকবেই। তবে এবার প্রার্থী নয়, ধানের শীষ দেখে ভোট দেবেন সবাই। এটাই আমাদের বিশ্বাস।

সূত্র, যুগান্তর

শেয়ার করুন :
Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp